উন্নত জীবনের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশীরা। সেখানে গিয়ে আটকও হচ্ছেন অনেকে। এরই মধ্যে আটক পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে জার্মানি। এ নিয়ে বাংলাদেশকে চিঠিও দিয়েছে দেশটি।
পশ্চিমা দেশগুলোয় আশ্রয়ের সুযোগ পেয়েছেন, এমন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে তুরস্ক হয়ে জার্মানি কিংবা ইউরোপের অন্য দেশগুলোয় পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশীরা। এছাড়া অনেকেই সাইপ্রাস, গ্রিস ও ইতালি হয়ে ইউরোপের অন্য দেশগুলোয় যাচ্ছেন। পাঁচটি রুট দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৩০ জন বাংলাদেশী ইউরোপে প্রবেশ করছেন। এদের বেশির ভাগই আসছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।
জার্মানির মিউনিখে অবস্থানরত এক বাংলাদেশী জানান, দুবাই থেকে তিনি স্থলপথে তুরস্কে যান। সেখান থেকে গ্রিসে থেকেছেন তিন বছরের বেশি। এর পর বুলগেরিয়া হয়ে পৌঁছেন জার্মানি। উন্নত জীবনের আশায় পাড়ি দিয়েছিলেন ইউরোপে। তবে বৈধতা পাননি। তাই জার্মানিতে এসেছেন বৈধতা পাওয়ার আশায়।
জানা গেছে, প্রায় ৫০০ বাংলাদেশীকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করেছে জার্মান সরকার। বৈধতার আইনি লড়াইয়ে তারা হেরে যাওয়ায় চলতি বছরের মধ্যেই তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চায় বার্লিন। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে জার্মানি। ঢাকার তরফে অবশ্য তাদের গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো হয়নি। তবে তালিকাভুক্তদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হতে কিছুটা সময় চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, জার্মানিতে প্রায় ৫০০ বাংলাদেশীর বৈধতার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তাদের অবিলম্বে ওই ভূখণ্ড ছাড়তে হবে জানিয়ে বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসে একটি কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দফতর। গত মাসে রাষ্ট্রদূত বরাবর পাঠানো ওই পত্রে উল্লিখিত অবৈধ বাংলাদেশীদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া দ্রুততর করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২৫ এপ্রিল বার্লিনে স্টেট সেক্রেটারি পর্যায়ের বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মো শহিদুল হকের অঙ্গীকারে বার্লিন খুশি। সচিব তাদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করার অঙ্গীকার করেছেন। জার্মানি চায় চলতি বছরের মধ্যেই বিষয়টি সম্পন্ন করতে।
চিঠির পরামর্শ অনুযায়ী, জার্মানিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার সেকশনের কর্মকর্তারা তালিকাভুক্ত অবৈধ বাংলাদেশীদের নিয়মিতভাবে সাক্ষাত্কার নিতে পারেন। বিয়েলফেল্ড ফরেনার্স অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই সাক্ষাত্কার নেয়া হতে পারে। সেখানে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে যারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবেন, তাদের দেশে ফেরানোর জন্য দূতাবাসের কর্মকর্তা তাত্ক্ষণিক ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করতে পারেন। সাক্ষাত্কারেও যাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যাবে না বা সন্দেহ হবে, তাদের বিষয়টি ঢাকার বিবেচনায় পাঠানো হবে।
জানা গেছে, চলমান যুদ্ধাবস্থা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় গত বছর থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের লিবিয়া ভ্রমণ না করার পরামর্শ বলবত্ রেখেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে দেশটিতে নতুন কোনো শ্রমিক পাঠানোর ওপরও রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। তা সত্ত্বেও বিকল্প উপায়ে বাংলাদেশী নাগরিকদের লিবিয়া যাত্রা ঠেকাতে ২ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তার পরও একশ্রেণীর দালালচক্রের সহায়তায় অবৈধ উপায়ে লিবিয়া যাচ্ছেন অনেকে। সেখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, বিকল্প পথে লিবিয়া যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো, অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করা। লিবিয়া হয়ে বাংলাদেশীরা ইতালি অথবা গ্রিস হয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রবেশ করে। এরই মধ্যে অবৈধভাবে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশী ৫০০-এর মতো বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে চিঠি দিয়েছে জার্মানি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যানভিত্তিক অধিদপ্তর ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ইউরোপে ১১ হাজার ৬৭৫ জন বাংলাদেশী আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজারে। আশ্রয়প্রার্থী এ বাংলাদেশীদের আবেদনের মধ্যে মঞ্জুর হয়েছে ১০ শতাংশ। বাংলাদেশীরা এ সময়ে সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছেন ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও আয়ারল্যান্ডে।
পাঠকের মতামত